রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলি
আমার কাছে শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব শুরু। শীতকালে বাঙালিদের পিঠা খাওয়ার উৎসব আনন্দের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। বাংলাদেশের এক এক অঞ্চলে এক এক রকমের পিঠার প্রচলন রয়েছে। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় পিঠা তৈরির ব্যস্ততা। আর রাজশাহীর শীতের পিঠা সবসময়ই আলাদা। রাজশাহীর শীতের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো খেজুরের রসের তৈরি চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা। এসব পিঠার মধ্যে আজও রাজশাহীর মাটির গন্ধ ও মানুষের মমতা জড়িয়ে আছে।
রাজশাহীর শীত মানেই এক রকমের নস্টালজিয়া, সংস্কৃতি এবং সম্পর্কের বন্ধন ফিরে পাওয়া। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মা-বোনেরা ব্যস্ত হয়ে যান চালের গুঁড়া, খেজুরের রস, দুধ আর নারকেল মিশিয়ে পিঠা বানাতে। পিঠা খাওয়া, আড্ডা, গল্প, হাসি-আনন্দ—সবই মিলে একসাথে পুরো রাত জুড়ে পিঠা বানানো এবং রান্নায় ব্যস্ততা। এ মুহূর্তই যেন একটি মিষ্টি উৎসব।
বর্তমানে শহর অঞ্চলেও নানা রকম পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের সময় খেজুরের রসের সঙ্গে দিনের সুখ মিশে থাকে। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমেই রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলি একটি রঙিন স্মৃতি, মিষ্টি আবেগ এবং সাংস্কৃতিক অনুভূতির প্রতিচ্ছবি।
ঐতিহ্যের নিদর্শন রাজশাহীর পিঠাপুলি
ঐতিহ্যের নিদর্শন বলতে আমরা বুঝি, যে বিষয়টি প্রাচীন হতেই বর্তমান চল এসেছে এবং সময়ের ধারাবাহিকতায় টিকে আছে যা আমাদের জাতি, সমাজ, বা অঞ্চলকে এখনও ধারাবাহিক ঐতিহ্য বহন করে।
পিঠা ঐতিহ্যময় একটি খাবার নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ভাবধারা ও সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি। শীতে মা ও দাদী মিলে পিঠা বানানো, সহায় সহকারীরাও সাহায্য করে। এই মিলন মেলাই পরবর্তীতে সমাজে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে নিয়েছিল।
রাজশাহীর পিঠাপুলি ঐতিহ্য
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি শীতেই সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার, তা শুধু পিঠা রাজশাহীর মানুষের ভাবধারা, সংস্কৃতি ও আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে। শীত এলেই এ অঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে চলেন পিঠা তৈরির উৎসব। খেজুরের রস, দুধ ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে রসের সাথে চুলায় চাড়িয়ে মোয়া মোয়া করে তুলে। এ পিঠা হচ্ছে ঐ মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি।
রাজশাহীর শীতের নিদর্শন পিঠাপুলি
রাজশাহীর শীতের নিদর্শন অনন্য। এ অঞ্চলের শীতকালীন ঐতিহ্য, রীতি-রেওয়াজ এবং উৎসবের সঙ্গে পিঠার নাম গভীরভাবে জড়িত। শীত এলেই রাজশাহীর মানুষ নতুন উৎসব ঘরে তোলে—ভালোবাসা, মমতা এবং আনন্দের মিশেলে। শীতের শুরু মানেই যেন উৎসবের ডাক। গ্রামের নারীরা ঐতিহ্যবাহীভাবে বানাতে থাকেন চিতই, ভাপা, দুধপিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদি নানা পিঠা। প্রতিটি পিঠার মধ্যেই থাকে আনন্দ, হাসি, আর ভালোবাসা।
প্রত্যেকেই রাজশাহীর পিঠাপুলি খেয়ে অনুভব করে আমাদের সংস্কৃতির মর্মবাণী ও আবেগের উষ্ণতা। শীতের সকালে পিঠা তৈরি, পরিবারের সবাই মিলে খাওয়া এবং অতিথি আপ্যায়নের মুহূর্তগুলো রাজশাহীর মানুষের কাছে এক আনন্দময় উৎসবের মতো।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিঠার রূপ কিছুটা বদলেছে। পিঠার আকার, স্বাদ এবং উপস্থাপনায় এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু শীতের সেই পিঠার ঘ্রাণ আজও তেমনি প্রাণ জাগানো, ঠিক রাজশাহীর মানুষের মতোই। পিঠা এখানে শুধু খাবার নয়, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে নিয়ে চলেছে বাঙালির পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধন।
রাজশাহীর পিঠাপুলি তাই শুধু শীতের উৎসব নয়, এটি এক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, যা আমাদের সংস্কৃতি, আনন্দ, এবং ভালোবাসাকে একসাথে জাগিয়ে রাখে। সত্যিই, রাজশাহীর পিঠাপুলি বাঙালির হৃদয়ে জাগিয়ে রাখে মমতা ও মিষ্টির মেলবন্ধন, যা প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসার উষ্ণ বার্তা।
রাজশাহীর জনপ্রিয় পিঠা:
জনপ্রিয় পিঠা হলো সে সব পিঠা, যে পিঠাটি সবচেয়ে বেশী বানানো হয়। বেশী সংখকিছু জনপ্রিয় পিঠা হলো, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, খোলাজা, পাকন পিঠা, তিল পিঠা, লবঙ্গলতিকা। ভাপা পিঠা কেবল সুধু হয় এর জন্য না, বরং এটা রাজশাহী র ঐতিহ্য।
ভাপা পিঠা: চালের গুঁড়া, নারকেল, খেজুর গুঁড় দিয়ে ভালো তৈরী করা হয় এ পিঠা। এটা সকালে বেলা গরম গরম খেতে খুবো মজা।
চিতই পিঠা: চালের গুঁড়া দিয়ে এ পিঠা তৈরী করা হয়। এবং দূরে নারকেল ও গুঁড় দিয়ে এর সিরা তৈরী করতে হয়। রাতে সিরায় দিয়ে সকালে খেতে, এ পিঠা খুবই সুস্বাদু।
পাটিসাপটা: চালের গুঁড়া সুজি দিয়ে পাতলা গোল তৈরী করে পাটিসাপটা পিঠা তৈরী করতে হয়। এ পিঠার মধ্যে হালুয়া দিতে হয়, এটি বাচ্চাদের অনেক প্রিয় পিঠা।
তিল পিঠা: এ পিঠা তিল ও গুঁড় এর অনুষ্ঠানে তৈরী করা হয়। এটি শুধু শীতেই খেতে হয়।
খেজুরের গুড়: খেজুরের গুড় রাজশাহীর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় উপদান। চালের গুঁড়ো, দুধ, নারিকেলের দিয়ে এ পিঠা তৈরী হয়। পিঠার মধ্যে নারিকেলের হালুয়া ব্যবহার করা হয়।
খেজুরের গুড়ের সাথে রাজশাহীর ইতিহাস:
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির সুস্বাদু করার অন্যতম উপাদান হলো খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, এটি চাল, নারিকেল ও দুধের সাথে মিশে পিঠাকে নরম, সুস্বাদু ও অতুলনীয় স্বাদে রূপান্তর করে।
রাজশাহীর ও এর আশেপাশের অঞ্চলে তুলার মাটি ও জলবায়ু খেজুরের চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলে উৎপাদিত খেজুরের গুড় প্রভূত বাদামী, স্বাদে সুমিষ্ট,
ও সুগন্ধি। যা অন্যান্য অঞ্চলের সাথে তুলনা চলে না।
শুধুমান্ সুস্বাদু নয়, খেজুরের গুড় অনেক পুষ্টি-গুণ সম্পন্ন। প্রাকৃতিক শর্করা, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন বিদ্যমান। তাই এটি মিষ্টি হওয়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকরও।
আমাদের পিঠাপুলি বানানোর ঐতিহ্য এই গুড়ের সাথে সম্পর্কীত। গ্রামের নারীরা যখন মাটির চুলোয় পিঠা বানায়, তখন এ খেজুরের গুড় দুধের সাথে মিশ্রিত হয়ে এক মোহনীয় এক ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয়। যা মোহনীয় করে তোলে। তাই রাজশাহীর গুড় ঐতিহ্যের প্রানস্পন্দন হিসেবে পরিচিত।
রাজশাহীর পিঠা উৎসব ও সামাজিকতা:
পিঠা উৎসব হলো বাংলার একটি জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পিঠার প্রদর্শনী ও বিকিকিনি হয়। এটি শুধু খাবার উৎসব নয়, বরং আনন্দ, মিলন ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীক।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত নিয়মিত পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম গ্রামীণ ঐতিহ্য ও পিঠার সাথে পরিচিত হয়ে থাকে।
রাজশাহীতেও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক সংগঠনগুলো পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এটি আমাদের শুধু খাবারের আয়োজন নয়, বরং এটি আমাদের সামাজিক আনন্দানুষ্ঠান। গ্রামে ও শহরের পিঠা উৎসবের ধরণটি ভিন্ন। শহরে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ মূলত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু
গ্রামে ও শহরের পিঠা উৎসবের ধরণটি ভিন্ন। শহরে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ মূলত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু গ্রামে সবাই মিলে নিজেদের বানানো পিঠা বিক্রি ও বিনিময় করে থাকে। সবাই মিলে হাসি-আড্ডায় মেতে ওঠে। এভাবেই পুরনো প্রজন্মের সাথে নতুন প্রজন্মের সংযোগ ঘটে।
পিঠা উৎসবের মূল সৌন্দর্যই হলো সামাজিক বন্ধন। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুরা খাবার ও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। এটি পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার প্রতীক।
পিঠাতে আধুনিকতার ছোঁয়া।
পিঠাতে আধুনিকতার ছোঁয়া বলতে আমরা সুস্বাদু, ঐতিহ্যবাহী পিঠাকে নতুন উপকরণ, স্বাদ, ও পরিবেশনার মাধ্যমে আধুনিক ভাবে উপস্থাপন করাকে বুঝি।
বর্তমান প্রজন্ম ঐতিহ্য ধরে রেখে পিঠাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পূর্বে যেখানে শুধু সুজি, চাল ও নারকেল ব্যবহার করা হতো, সেখানে এখন ক্রিম, চকোলেট, পনীর, ফলের ফ্লেভার দিয়েও পিঠাও তৈরি করা হচ্ছে। যেমন: চকোলেট পাটিসাপ্টা, চিজ পুলি পিঠা, ফল ভরা ভাপা পিঠা, ইত্যাদি। এগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
পিঠার পরিবেশনা ও বানানোর ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে পিঠার আয়োজন শুধুমাত্র শীতকাল বাদে হবে এমনটি ধারণা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বছরের যে কোনো ঋতুতে, এমনকি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতেও পিঠা বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহীর অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এই ঐতিহ্যকে আধুনিক ভাবনায় রূপদান করে সাথে অর্জন করছে
সংস্কৃতিতে পিঠার গুরুত্ব
পিঠা বাংলার লোকজ সংস্কৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের ঐতিহ্য ও জীবন-সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে।
রাজশাহীতে পিঠা শীতকালের রসনাজাতীয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। নতুন ধান ওঠার পর নবান্ন উৎসব, পৌষ-সংক্রান্তি, লোক-পারণ এগুলো আমাদের কৃষিজয়ের একটি অংশ।
নতুন ফসল তুলে নতুন চালের গুঁড়ো দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়, যা আমার কৃষক সমাজের আনন্দ ও প্রাচুর্যের প্রতীক।
রাজশাহীতে শুধু শীতকালে আতিথেয়তায় পিঠার সম্মান রয়েছে। নিকট আত্মীয়, বিশেষত জামাই-মেয়েকে পিঠার দাওয়াত করা হয়।
বিয়ের পরে পুলি পিঠা একভাবে বানানো সম্ভব হয় না। সেখানে মাসী, মাসীমা, খালা, চাচী প্রমুখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। এতে পরিবারে একতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
বিয়েতে বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে পিঠার উৎসব এখনও আছে রাজশাহীতে। আমরা ছোটবেলায় ছিট পিঠা খাওয়ার জন্য বিয়ে বাড়ি ভিড় জমাতাম। পিঠা পরিবেশনা এক শুভ সূচনা ও আনন্দের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
আমি আমার ছোট বেলার গল্পটা বলতে এসেছি।
শীতের রাত। রাজশাহীর ছোট গ্রাম। বাতাসে শীতের কনকনে পরশ। ‘মা’ চুলার পাশে আলো জ্বেলেছেন। মা চুলার পাশে বসে ছোট্ট বাচ্চাদের নিয়ে।
মা রাত জেগে নানা রকম পিঠা বানাচ্ছেন। দুধপুলি পিঠা, আয়েসা পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদি। পিঠাগুলো আলাদা আলাদা পাত্রে সাজানো। মা মনোযোগ দিয়ে চালগুঁড়ো, সুজি, নারকেল কুচি মিশিয়ে পিঠার রূপ দিচ্ছেন। মায়ের মুখে নরম হাসি। যেন তিনি জানেন, এ পিঠা শুধু খাবার বস্তু নয়, বরং শীতের স্মৃতি, আনন্দ এবং পারিবারিক মিলনমেলা।
ছেলেমেয়েরা চুলার পাশে বসে পিঠা বানানো উপভোগ করে। আর অপেক্ষা করে, সকালে যখন সুগন্ধ (বা 'সুঘ্রাণ') আসবে। বাবা-ভাইবোন আসবে। দাদা বসে বসে দিকনির্দেশনা দেন। মা মনোযোগ দিয়ে পিঠা বানান, কারণ বাবাও ভালো পিঠা খেতে ভালোবাসেন।
এভাবে রাত ভালো হয়। মা ক্লান্ত কিন্তু মুখে হাসি। এটি তো হতে হবেই, এটাই মায়ের শান্তি।
পরদিন সকালে মায়ের বাড়ি ভর্তি মেহমান আসে। মায়ের যত আয়োজন বা মুখে তুলে দেওয়া। বাবা, দাদী সবাই খুব সুখী হন। সেই এক পারিবারিক মিলনমেলা এবং আনন্দ বিস্তৃত হয় কুপি জ্বালার পথে।
পিঠা খাওয়ার উপকারিতার দিকও রয়েছে। যেমন:
পিঠার প্রধান উপকরণ হলো চাল, দুধ, গুড় ও নারিকেল।
এগুলো শরীরের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য যোগান দেয়।
বিশেষ করে শীতকালে পিঠা খাওয়া শরীরে গরম রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে।
চাল ও চিড়া কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস।
দুধ ও নারিকেল প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের উৎস। এছাড়া খেজুরের গুড়ে স্নেহ, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং উষ্ণতা। এককথায় বলা যায়, পিঠা একটি সুষম খাদ্য।
তবে, পিঠা খাওয়ার জন্য কিছু সতর্কতা রয়েছে।
বিশেষ করে শীতকালে পিঠা খাওয়া শরীরে গরম রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে।
চাল ও চিড়া কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস।
দুধ ও নারিকেল প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের উৎস। এছাড়া খেজুরের গুড়ে স্নেহ, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং উষ্ণতা। এককথায় বলা যায়, পিঠা একটি সুষম খাদ্য।
তবে, পিঠা খাওয়ার জন্য কিছু সতর্কতা রয়েছে।
বিশেষ করে অতিরিক্ত পিঠা খেলে বদহজম হতে পারে। বেশি তেল জাতীয় খাবার পেট ফেঁপে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শেষ কথা: পারিবারিক ভালোবাসার প্রতীক আমাদের এ পিঠা। এটি মূল সুরের পর সুর যুক্ত করে রাজবাড়ীর মানুষের মধ্যে আবেগ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক ধরে রেখেছে।
রাজনৈতিক আমলেই শহর থেকে গ্রাম, সব অঞ্চলের মানুষের মুখে পিঠা খুব প্রিয় খাদ্য। নতুন চালের, গুড়ের সাথে, খেজুরের গুড়, দুধ, নারিকেল আর কতো কিছুই যুক্ত হয়ে, নকশি পিঠা, চিতই, পাটিসাপটা, ভাপা, দুধপুলি, পুলি পিঠা ইত্যাদি পিঠা খাওয়ার মজাটাই যেনো মনের আনন্দ ও বহু সুখের
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
এই হাতে লেখাটি মূলত পিঠা (বা পিঠে), একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার, তার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে।
পিঠার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
পিঠার প্রধান উপকরণগুলো হলো চাল, দুধ, গুড় ও নারিকেল। লেখক এই উপাদানগুলোর ভিত্তিতে পিঠার উপকারিতা তুলে ধরেছেন:
পুষ্টি সরবরাহ: এগুলো শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য বা পুষ্টি সরবরাহ করে।
উষ্ণতা ও শক্তি: বিশেষ করে শীতকালে পিঠা খেলে শরীর গরম থাকে এবং ক্লান্তি দূর হয়।
সুষম খাদ্য:
চাল ও চিড়া - কার্বোহাইড্রেটের (শর্করা) ভালো উৎস।
দুধ ও নারিকেল - প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের উৎস।
খেজুরের গুড় - স্নেহ (ফ্যাট), ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং উষ্ণতা (তাপ) প্রদান করে।
এককথায় পিঠাকে একটি সুষম খাদ্য বলা যায়।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত পিঠা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতাও দেওয়া হয়েছে:
বদহজম: অতিরিক্ত পিঠা খেলে বদহজম হতে পারে।
পেট ফাঁপা: বেশি তেল জাতীয় খাবার (তেলে ভাজা পিঠা) পেট ফেঁপে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব (শেষ কথা)
পিঠাকে পারিবারিক বন্ধন ও সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে:
ভালোবাসার প্রতীক: পিঠা হলো পারিবারিক ভালোবাসার প্রতীক।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক: এটি আবেগ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে ধরে রাখে।
জনপ্রিয়তা:
শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব অঞ্চলের মানুষের কাছে পিঠা খুব প্রিয় খাদ্য।
বিখ্যাত পিঠার নাম: বিভিন্ন উপকরণের (নতুন চাল, গুড়, দুধ, নারিকেল, খেজুরের গুড়) মিশ্রণে তৈরি কয়েকটি জনপ্রিয় পিঠার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন:
নকশি পিঠা
চিতই পিঠা
পাটিসাপটা
ভাপা পিঠা
দুধপুলি
পুলি পিঠা
উপসংহার: এই ধরনের পিঠা খাওয়ার মজাই যেনো মনে আনন্দ ও বহু সুখের বার্তা দেয়
রাজশাহীর নারীরা এখনো পিঠার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। চুলার
পাশে- বসে গল্পববারে সবাই মিলে পিঠা বানানো যেন এক
অনবদ্য সামাজিক আনন্দ।
রাজশাহীর মানুষের পিঠা সংস্কৃতি কেবলমাত্র স্বাদ না। এটি
মানুষে মানুষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক দৃঢ় করে।
আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব, সবাই মিলে
পিঠা খাওয়া, গল্প করা এবং হাসি-আনন্দে সময়
কাটানো রাজশাহীর সংস্কৃতির অন্যতম অংশ।
এ অঞ্চলে পিঠা উৎসব শুধু গ্রামীণ নয়,বরং
জাতীয় পর্যায়েও জনপ্রিয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে
পুরো শীত জুড়ে এই পিঠা উৎসব চলে।
সবশেষে বলতে চাই, রাজশাহীর পিঠা ঐতিহ্য
এলাকাবাসীর জীবন প্রতীক। পিঠা রাজশাহীর
মানুষের পরিচয় বহন করে। যা যুগে যুগে
আমাদের সংস্কৃতির গর্ব হয়ে থাকবে।


অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url